সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন
বরিশাল সিটি করপোরেশনের টাউন প্লানার বা নগর পরিকল্পনাবিদ বলে কোনো পদ না থাকলে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিগত পঞ্চম পরিষদের মেয়র ও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই তৎকালীন সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সময়ে কোনোরকমে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।আবার তারও পূর্ব মেয়াদের (চতুর্থ পরিষদের) চিহ্নিত বেশ কিছু লোক এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাল পুনরুদ্ধার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার কিংবা প্লান পাস নিয়ে গড়িমসি করে প্রশাসককে বিব্রত ও বিতর্কিত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রশ্ন নিয়ে বিব্রত সয়ং সিটি করপোরেশনের প্রশাসক।এদিকে নগরীর ভবন নির্মাণের প্লান পাস নিয়েও চলছে গড়িমসি।
চীফ প্লানার অফিসারকে সরিয়ে সেখানে খোকন সেরনিয়াবাতের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নগর প্লানার হয়েছেন সৈয়দা তাবাচ্ছুম ইসলাম। তার দায়িত্বশীলতা নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেক জমির মালিক। তারা বলছেন, প্রায় এক হাজার জমি ব্যবহারের সার্টিফিকেট আটকে আছে তার টেবিলে। নগরীর পরিবেশ নিয়ে গত একবছরে তার কোনো ভূমিকা চোখে পরেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের জন্য টাউন প্লানার বলে কোনো পদ আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের সুপারিশে খোকন সেরনিয়াবাত তাবাচ্ছুম ইসলামকে টাউন প্লানার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। টাউন প্লানার ষষ্ঠ থেকে নবম গ্রেডের একটি সরকারি পদ। সাধারণত শহর ও নগর অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা, নকশা প্রণয়ন, এবং ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত থাকেন তারা। তাদের কাজের মধ্যে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং জনসাধারণের জন্য বাসযোগ্য স্থান তৈরি অন্তর্ভুক্ত।
বরিশালের জন্য এ জাতীয় পদ সৃষ্টির চেষ্টা চলমান রয়েছে। তাই মৌখিকভাবে কোনোরকম গ্রেডভুক্তি ছাড়াই তাবাচ্ছুম ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাবাচ্ছুম ইসলাম এই দায়িত্বে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করে বলেন, বরিশাল শহরেই আমার বেড়ে ওঠা ও পড়াশুনা। তাই পড়াশুনা শেষ করে বরিশালেই থাকতে চেয়েছি। কারণ এই শহরটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। এই শহর সাজানোর সুযোগ চেয়েছিলাম। তবে এখনো পরিপূর্ণ দায়িত্ব পাইনি বলে কাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কতোগুলো ল্যান্ড ইউজার সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে এবং কতোগুলো আবেদন জমা রয়েছে সে তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা এসব তথ্য দেবেন। অথবা সিইও রেজাউল বারী থেকে অনুমতি প্রয়োজন হবে।
জানা গেছে, সৈয়দা তাবাচ্ছুম ইসলাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করে চাকরির প্রয়োজনে তৎকালীন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের দারস্থ হন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি এই দায়িত্বে রয়েছেন। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং বর্তমান বিসিসির প্রশাসক রায়হান কাওছারের মৌখিক নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৯ অক্টেবর বিসিসির এক সাধারণ সভায় টাউন প্লানার, শশ্মান গার্ড, সিকিউরিটি গার্ড, ইপিআই সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে অর্গানোগ্রামের বাহিরে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছেন তাদের চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিসিসির সাবেক প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী ওই সভার সভাপতিত্ব করেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রায় একবছর অতিবাহিত হলেও কার্যকর করেননি বিসিসির নতুন প্রশাসক মো. রায়হান কাওছার। তবে ওই অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্তদের যার যখন মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাকে তখনই ছাটাই করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত টাউন প্লানার পদের সৈয়দা তাবাচ্ছুম ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ জুলাই। কিন্তু এরমধ্যেও তাকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে বর্তমান প্রশাসন এসব রাজনৈতিক নিয়োগ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সম্প্রতি তার চুক্তির মেয়াদ শেষহলেও বর্তমান প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে তাকে এখনো বহাল রেখেছে মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তবে টাউন প্লানার পদ সৃষ্টির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে জানিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সিইও রেজাউল বারী বলেন, বিতর্কিত যারা তারা নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টাউন প্লানার পদটি খুবই জরুরি প্রয়োজন। সেলক্ষ্যে আবেদনও করা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমোদন আসেনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার বলেন, মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার চাকরি হয়েছিল। কিন্তু অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত পদে নিয়োগ পাওয়া অবৈধ কিনা সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
সূত্র:-জনকন্ঠ
Leave a Reply