বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় সালিশের নামে ইউপি সদস্যের নির্দেশে পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে উপজেলার চরচতলাখালী ইউনিয়নের মধ্য চতলাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে এই অপমানজনক কাজটি করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যায়— রেশাদ খলিফা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন, আর এক নাপিত পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত শুক্রবার এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে শনিবার রাতে মনিরের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ান ফের তর্কে জড়ায়।
রোববার সকালে বিষয়টি মীমাংসার জন্য ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতে খুতির বাজার এলাকায় সালিশ বসানো হয়। সেখানে দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে পাঁচ তরুণকে “বখাটে” আখ্যা দিয়ে রেশাদ খলিফা নিজেই নাপিত ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন।
ভুক্তভোগীরা হলেন —রাব্বি (১৮), রিয়ান (২১), রাতুল (১৭), শাকিল (১৯) ও নয়ন সরদার (১৮)।
ভুক্তভোগী নয়ন সরদার বলেন,“রাব্বি ও রিয়ানের ঝগড়া থামাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সকালে মেম্বার ফোন দিয়ে ডেকে নেন। গিয়ে দেখি, তিনি নাপিত এনে দুইজনের চুল কেটে দিচ্ছেন। অনুরোধ করেও রেহাই পাইনি।”

তার মা ঝর্ণা বেগম বলেন,“আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি, শুধু মারামারি থামাতে গিয়েছিল। অথচ মেম্বার নিজে উপস্থিত থেকে তার মাথা ন্যাড়া করেছে। এটা আমাদের জন্য চরম অপমানজনক।”
অন্য ভুক্তভোগী রাব্বি বলেন,“রিয়ান ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছিল, কিন্তু সালিশে আমাদের সঙ্গে আরও তিনজন নিরপরাধ ছেলেকেও মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে।”
অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বক্তব্য অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।”তবে ভিডিওতে উপস্থিতির বিষয়টি জানালে তিনি বলেন,“ওদের পিতা—মাতার উপস্থিতিতেই মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে।”
সেলুন মালিকের স্বীকারোক্তি চুল কেটে দেওয়া সেলুনের মালিক স্বপন শীল জানান,“রেশাদ মেম্বার নিজে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জিরো মেশিন নিয়ে গিয়ে পাঁচজনের চুল কেটে দিতে।”
রাঙ্গাবালী থানার ওসি শামীম হাওলাদার বলেন,“বিষয়টি জেনেছি। কেউ অভিযোগ দিলে এবং প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ জানান,“ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, সালিশের নামে প্রকাশ্যে নাগরিক অপমানের এ ধরনের ঘটনা সমাজে ভীতিকর দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এমন ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হবে না।
Leave a Reply