শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০০ অপরাহ্ন
 
								
                            
                       আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে অবৈধভাবে আমদানি করা বা কর ফাঁকি দিয়ে আনা অবৈধ স্মার্টফোন বন্ধ করবে সরকার। কর ফাঁকি রোধ, অপরাধ দমন এবং ধুঁকতে থাকা স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যবহারকারীদের এর জন্য জন্য কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না। বর্তমানে ব্যবহৃত অবৈধ ফোনগুলো বন্ধ হবে না।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, অবৈধ স্মার্টফোনের ব্যবহার বন্ধে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) নামের একটি ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। সিস্টেমটি চালু হলে এটি অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ, চুরি যাওয়া বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো সহজেই শনাক্ত ও ব্লক করা যাবে। এটি নকল হ্যান্ডসেটের সংখ্যা কমাতেও সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) জালিয়াতি, সিম—সংক্রান্ত প্রতারণা এবং অন্যান্য ডিজিটাল জালিয়াতি কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, মোবাইল ফোন নির্মাতারাই এই সিস্টেমটি একীভূত করার জন্য অর্থায়ন করেছে। তিনি আশ্বাস দেন, বিটিআরসি হঠাৎ করে কোনো হ্যান্ডসেট বন্ধ করবে না। ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্পষ্ট নির্দেশনা ও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা কোনো অসুবিধায় না পড়েন।
জানা গেছে, এনইআইআর সিস্টেমটি মূলত ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর ব্যবহার করে চুরি যাওয়া বা অবৈধ মোবাইল ডিভাইস শনাক্ত ও ব্লক করে। প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য ১৫—সংখ্যার স্বতন্ত্র কোড থাকে। এর আগে ২০২১ সালে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। কিন্তু কারিগরি জটিলতা এবং লাখ লাখ অবৈধ ফোন একবারে বন্ধ করলে জনসাধারণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় তা করা হয়নি। এছাড়া একই আইএমইআই নম্বরে শত শত ফিচার ফোনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তখন। এ কারণেও বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
বিটিআরসি জানিয়েছে, অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ, চুরি কমানো, অনিবন্ধিত ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ এবং দেশীয় হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের অন্যায্য প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধ শনাক্ত করতেও এটা সহায়ক হবে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয় তার ৪০ শতাংশেরও বেশি অবৈধভাবে বাজারে আসে। এর ফলে সরকার বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং স্থানীয় উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এনইআইআরের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেশীয় নির্মাতাদের স্বস্তি দেবে।
অবৈধ স্মার্টফোন শনাক্ত করা হবে যেভাবে
এনইআইআর ডেটাবেজে প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর রেকর্ড থাকে। যখন কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়, তখন এর আইএমইআই নম্বরটি এনইআইআর ডেটাবেসের সঙ্গে যাচাই করা হয়। ডিভাইসটি নিবন্ধিত ও বৈধ হলে তা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। কিন্তু নকল, ডুপ্লিকেট বা অনিবন্ধিত আইএমইআই থাকলে ডিভাইসগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক হয়ে যাবে এবং নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারবে না।
আপনার কেনা ফোনটির বৈধতা যাচাই করবেন যেভাবে
নতুন ফোন কেনার আগে, ব্যবহারকারীরা ফোনের প্যাকেটে থাকা আইএমইআই নম্বর নিয়ে কণউ <স্পেস> [ওগঊও নম্বর] ফরম্যাটে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে এর বৈধতা যাচাই করতে পারবেন। ফিরতি বার্তায় হ্যান্ডসেটটি বৈধ কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিদেশ থেকে আনা ফোন নিবন্ধন করবেন যেভাবে
বিদেশ থেকে বৈধভাবে আনা বা উপহার হিসেবে পাওয়া ফোনের ক্ষেত্রে, ব্যবহারকারীদের এনইআইআর পোর্টালে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেখানে ডিভাইসের আইএমইআই জমা দেওয়ার পাশাপাশি পাসপোর্ট কপি, ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্প ও ক্রয়ের রশিদের মতো নথি আপলোড করতে হবে। যাচাইয়ের পরই হ্যান্ডসেটটি নেটওয়ার্কে স্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি পাবে।
সিস্টেমটিতে মালিকানা হস্তান্তর ও নিবন্ধন বাতিলের সুবিধাও রয়েছে। ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বিক্রি বা উপহার দেওয়া হলে, পূর্ববর্তী মালিককে এনইআইআর পোর্টাল, মোবাইল অ্যাপ বা ইউএসএসডি চ্যানেলের মাধ্যমে নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
হারানো বা চুরি হওয়া ফোনও তাৎক্ষণিকভাবে ব্লক করা যাবে। এর ফলে এটি সব নেটওয়ার্কে অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়বে।
Leave a Reply