শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
 
								
                            
                       পটুয়াখালীর দশমিনার দুর্গম চরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবকের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে টাইফয়েডের টিকাদান।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরবোরহান ইউনিয়নের মধ্যে চরবোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তারা হামলা চালায়।
এ সময় হামলাকারীরা স্বাস্থ্য সহকারী মো. ইমাম হোসেনকে মারধর করে, টিকার বাক্স ও সিরিঞ্জ ভেঙে ফেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ওই যুবকেরা টিকা নিলে শিক্ষার্থীরা মারা যাবে, কঠিন অসুখে ভুগবে– এমন কথা বলছিলেন।
ওই বিদ্যালয়টি পড়েছে তেঁতুলিয়া নদীর ওপারে। ফলে দশমিনা উপজেলা সদর থেকে প্রায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে টাইফয়েডের টিকা নিয়ে নানা গুজব চলছিল। বুধবার যখন ওই বিদ্যালয়ের শিশুদের টিকাদান শুরু হচ্ছিল, তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক বাধা দেয়। তাদের কেউ বলতে থাকেন, এই টিকা দিলে শিক্ষার্থীরা মারা যাবেন। কেউ বলেন, টিকা নিলে কঠিন অসুখ হবে।
ওই টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. ইয়াকুব হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টায় আমরা বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করি। এ সময় স্থানীয় ১০—১২ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সবাইকে বের করে নিয়ে যেতে চান। স্বাস্থ্য সহকারীরা কারণ জানতে চান। এ সময় তারা বলছিলেন, ওই টিকা নিলে শিক্ষার্থীরা মারা যাবে অথবা কঠিন অসুখে পড়বে। স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের বাধা দিলে ওপর হামলা চালায়।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা টিকা রাখার বাক্স ও সিরিঞ্জ ভাঙচুর করে। এ সময় স্বাস্থ্য সহকারী মো. ইমাম হোসেনকে মারধর করে। পরে তারা ওই কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
১০২ নম্বর চরবোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাকের ভাষ্য, বিদ্যালয়ের সব শিশুকে তারা টিকা নেওয়ার জন্য উপস্থিত করেছিলেন। টিকাদান শুরুর আগেই একদল লোক বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। এ সময় টিকাদানে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তাদের গন্ডগোল হয়।
চরবোরহান ইউপির প্রশাসকের দায়িত্ব আছেন ডা. ফারজানা ইয়াসমিন লিসা। তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানার পরপরই তিনি দশমিনা থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান।
চরবোরহান ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরহাদ আকন বলেন, ওই এলাকার সাদেক মাতুব্বরের ছেলে জামাল মাতুব্বর, মনু সরদারের ছেলে জসিম সরদারসহ ৮—১০ জন বিদ্যালয়ে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তারা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘এই টিকা দিলে শিশুরা মারা যাবে বা কঠিন অসুখে ভুগবে। এর দায় কে নেবে, আপনারা নেবেন?’
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ খালিদুর রহমান মিয়া বলেন, ‘সমাজে কিছু মানুষ আছে, তারা কোনোকিছু না বুঝে, না জেনে– অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ায়। তেমনই একটা ঘটনা ঘটেছে দশমিনায়। জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। আশা করি, এসব বিভ্রান্ত ও অপপ্রচারে এ টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে না। এ পর্যন্ত জেলায় বহু শিশু টিকা দিয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছে।’
তিনি এমন কর্মকাণ্ড ও অপপ্রচার ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হামলাকারীদের বক্তব্য জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
দশমিনা থানার ওসি মো. আব্দুল আলীম জানান, তারা বিষয়টি শুনেছেন। তবে উপজেলা সদরের সঙ্গে চরবোরহানের সড়কপথে যোগাযোগ নেই। যে কারণে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
ইউএনও ইরতিজা হাসান জানান, বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে দশমিনা থানার ওসি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছেন।
Leave a Reply